সর্বশেষ সংবাদ
Freelance
প্রকাশিত: 11:21:29 pm, 2021-04-26 | দেখা হয়েছে: 7 বার।
নিউজ ডেস্কঃ বিশ্বে প্রথম কোনো একক সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৬০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণ করা হবে এই মডেল মসজিদগুলো। যেখানে নামাজের পাশাপাশি ইসলামি জ্ঞান চর্চা হবে, যার মাধ্যমে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা পৌঁছে যাবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। সেই সঙ্গে এসব মসজিদ থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির পাশাপাশি ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে। শুধু নামাজ নয়, তার পাশাপাশি ইসলাম চর্চার আধুনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে প্রতিটি মডেল মসজিদকে।
আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দেশজুড়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। যা একনেকে পাস হয় ২০১৭ সালে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সেই সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে ১০০ মসজিদ উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানানো হয়। এরই মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে সাভারসহ বেশি কিছু দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদের। শুধু নামাজ আদায় নয়, মসজিদ হবে গবেষণা, ইসলামি সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। হারিয়ে যাওয়া ইসলামের চিরায়ত এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুসলিম বিশ্বে এই প্রথম কোনো দেশের সরকারপ্রধানের উদ্যোগে একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে কোনো মুসলিম শাসক বা সরকারপ্রধান একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ করেননি। মডেল মসজিদে নামাজ পড়ার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চার সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়, এই মসজিদগুলোতে লাইব্রেরি থাকবে, থাকবে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ক গবেষণার ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে বিদেশি ইসলামি স্কলাররা যেন এ দেশে এসে থাকতে পারে সেজন্য থাকছে ২ হাজার ২৪০ অতিথি আবাসনের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে এটি শুধু একটি মসজিদ নয়, বরং আধুনিক ইসলামি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হবে এই মডেল মসজিদগুলো। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে সরকার। ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে।
জেলাপর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।
বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার।
উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে। একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা; উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরপক্ষে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
এ মসজিদগুলোতে নারী-পুরুষ উভয়ের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে। থাকছে তাদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এ ছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে। মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সারা দেশের এই মডেল মসজিদগুলো উদ্বোধন হলে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। লাইব্রেরিতে প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কুরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মুনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন। প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতি বছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা, ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে। ইসলাম চর্চার জন্য আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্মাণ হচ্ছে এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলো।